প্রকাশের সময় 22/06/2024
নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার দুটি উল্লেখযোগ্য বাজারের ইজারা (খাস কালেকশান) ডাক দেয়াকে কেন্দ্র করে সদ্য উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী গ্রুপ ও পরাজিত গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় উভয় পক্ষের অন্ততঃ ৩০ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে গুরুতর কয়েক জনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও বাকীদের কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত উত্তেজনা বিরাজ করছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উপজেলার বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ।
স্থানীয় এলাকাবাসী, পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (২২ শে জুন) দুপুরে কলমাকান্দা পূর্ব বাজার কলেজ মোড় বাজারের ডাক নিয়ে আওয়ামীলীগের দুইপক্ষ সদ্য উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস বাবুল এর ছোট ভাই আব্দুল ওয়াদুদ রতন গ্রæপের সাথে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চয়ন গ্রুপের মধ্যে প্রথমে কথা কাটাকাটি, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মত ঘটনা ঘটে। পরে দুইপক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। থেমে থেমে র্দীঘক্ষণ সংর্ঘষ চলার পর, ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্ততঃ ৩০ জনের মত আহত হয়। তাদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় ফজলে হাসান রাব্বি, লিটন মিয়া, শিপন মিয়া, মজিবর রহমানকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে রেফার্ড করে কলমাকান্দা জরুরি বিভাগের কর্ত্যরত চিকিৎসক। অপরদিকে মোস্তাফিজুর রহমান চয়ন, অমিত শাহ, রাসেল খানসহ অনেকেই গুরুতর অবস্থায় কলমাকান্দা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
বর্তমানে সারা বাজার থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। লাঠিশোঠা হাতে রতন গ্রুপ ও চয়ন গ্রুপের নেতাকর্মীরা বাজারের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে মহড়া দিচ্ছে।
সংঘর্ষে আহত স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমান চয়ন বলেন, এমপি সাহেব দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার সব চেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ কলমাকান্দা বাজার ও নাজিরপুর বাজার খাস কালেকশনের নামে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে উনার নিজেদের লোকদের দেয়। ফলে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে ঠিক তেমনি ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। আজ সকালে উন্মক্ত ডাক দেয়ার কথা থাকলে আমরা ডাকে অংশ নিতে গেলে এমপি সমর্থিত সদ্য বিজয়ী উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল কদ্দুছ বাবুলের ভাই আব্দুল ওয়াদুদ রতন ও তার ক্যাডাররা আমাকে ডাকে অংশ নিতে বাধাঁ দেয়। এর প্রতিবাদ করলে রতনের ক্যাডাররা আমিসহ স্থানীয় লোকজনের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। হামলায় অন্তত ৩০ জন আহত হয়।
এ বিষয়ে কলমাকান্দা উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল কদ্দুস বাবুল এর সাথে মোবাইলে বার বার যোগাযোগের চেষ্ঠা করা হয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে কলমাকান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ লুৎফুল হক জানান, কলমাকান্দা উপজেলা পরিষদের বতর্মান চেয়ারম্যান আব্দুল কদ্দুস বাবুল এর ভাই আব্দুল ওয়াদুদ রতন গ্রæপ ও পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চয়ন গ্রæপের লোকজনের মধ্যে বাজারের ডাক নিয়ে প্রথমে কথা কাটাকাটি হয়। পরে বাইরে এসে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়। এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ফের সংঘর্ষের আশংকায় উপজেলায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো মামলা হয়নি।
কলমাকান্দা উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, প্রতি সপ্তাহের মতোই আজকে সদর ভ‚মি অফিসে খোলা ডাকের ব্যবস্থা করছিলাম, ঝামেলা দেখে সবাইকে সরিয়ে দিয়ে ডাক বন্ধ করে দিয়েছি। এখন সরকারী তহশীলদার ও খাস আদায় কমিটি, খাস কালেকশান আদায় করবে।
এ ব্যাপারে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ জানান, যেখানে ঢাক হচ্ছিল সেখানে ঝামেলা হয়নি, তবে যেহেতু একটি ঝামেলা বা উত্তেজনা দেখা দিয়েছে বাজার নিয়ে, সেজন্য আমরা বাজারের খাস কালেকশন বন্ধ রেখেছি, স্থানীয় তহশিলদার এখন খাস কালেকশান আদায় করবে। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা আবার বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো।