সাধারণত জুয়া খেলা হয় বলে এমনিতেই ষাঁড়ের লড়াইয়ের আয়োজন নিষিদ্ধ। নিষেধ অমান্য করে নেত্রকোণার মদনে কাইটাইল ইউনিয়নের কেশজানির গ্রামের সামনের গণেশের হাওরে মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল ) ভোর ৪ঃ৩০ মিনিটে আয়োজন করে ষাঁড়ের লড়াই।
সূর্যের আলো ফোটার আগেই উপজেলার কাইটাইল ইউনিয়নে এই ষাঁড়ের লড়াই দেখতে আশপাশের গ্রামের ৫০০ থেকে ৬০০ মানুষ এসে জড়ো হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান ষাঁড়ের লড়াই নেত্রকোনা মদনের সামাজিক ঐতিহ্যের অংশ। স্থানীয়ভাবে একে আড়ং বলা হয়। গ্রামবাসীর কাছে এটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল একসময়। ষাঁড়ের লড়াইয়ের আয়োজনের কথা আগে থেকে মানুষের মুখে মুখে প্রচার পেয়ে জড়ো হয় গ্রামের লোকজন।
মঙ্গলবার ভোরের সূর্যের আলো ফোটার আগ থেকেই কেশজানি গ্রামের সামনে গণেশের হাওরে ফাঁকা মাঠে মানুষ জড়ো হতে থাকে। এরপর শুরু হয় কেশজানী শিবাশ্রম গ্রামের শাহ আলম এর ষাঁড় ও কেন্দুয়া উপজেলাধীন বলাই শিমুল গ্রামের তৌহিদ মিয়া ষাঁড়ের সাথে তুমুল লড়াই ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যক্তি বলেন, বেশির ভাগ মানুষ এসেছে ষাঁড়ের লড়াই দেখতো। তবে নেত্রকোণা ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন স্থান থেকে পেশাদার জুয়াড়িরা এসে তারা ষাঁড়ের লড়াইকে সামনে রেখে লক্ষ লক্ষ টাকা জুয়া খেলেন।
শিবাশ্রম গ্রামের বর্তমান ইউপি সদস্য জিয়াউর রহমান এর সহযোগিতায় ষাঁড়ের লড়াইয়ের আয়োজন করা হয় বলে জানান অনেকই। তবে এ বিষয়ে অস্বীকার করে ইউপি সদস্য জিয়াউর রহমান বলেন, জনগণের সাথে ষাঁড়ের লড়াই দেখার জন্য আমি মাঠে গিয়েছিলাম ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাইটাইল ইউপি চেয়ারম্যান সাফায়েত উল্লাহ রয়েল বলেন, প্রথমে আমি ইউএনও স্যারকে ধন্যবাদ জানাই। কেশজানী গ্রামের সামনে ষাঁড়ের লড়াইয়ের বিষয়ে স্যার আমাকে মোবাইল ফোনে জানায় ষাঁড়ের লড়াই হচ্ছ ,শুনে আমি ঘুম থেকে উঠে সাথে সাথে ঘটনাস্থলে এসে দেখি ষাঁড়ের লড়াই ভেঙে দিয়েছেন ইউএনও স্যার।
যারা এই অন্যায় কাজের সাথে জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
মদন থানার (ওসি) তদন্ত জাহাঙ্গীর আলম জানান, ঘটনাস্থলে গিয়ে চলমান ষাড়ের লড়াই ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কেন্দুয়া উপজেলার বলাইশিমুল গ্রামের তৌহিদ মিয়ার ষাঁড় গরু ও হুমায়ুন নামের একজন জুয়ারীকে আটক করা হয়েছে। তবে কারা এই আয়োজনের সঙ্গে জড়িত তদন্ত করে দেখা হচ্ছে এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান ওসি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ আলম মিয়া তিনি বলেন, ষাঁড়ের লড়াই হয় মদনে একথা দীর্ঘদিন ধরে আমি শুনে আসছি। ষাঁড়ের লড়াই হবে কেশজানী শিবাশ্রম গ্রামে গণেশের হাওরে শিবাশ্রম গ্রামের শাহ আলম মিয়ার ষাঁড় গরু এবং কেন্দুয়া উপজেলাধীন বলাইশিমুল গ্রামের তৌহিদ মিয়া ষাঁড় গরুর সাথে । হাতেনাতে ধরার জন্য সকাল বেলায় আমি ঘুম থেকে উঠে ঘটনাস্থলে চলে আসি ষাঁড়ের লড়াই চলমান অবস্থা ষাঁড়ের লড়াই ভেঙে দেই। তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণত জুয়া খেলা হয় বলে এমনিতেই ষাঁড়ের লড়াইয়ের আয়োজন নিষিদ্ধ।
আজ ভোর ৪ টা ৩০ মিনিটের দিকে স্থানীয় সূত্রে খবর পেয়ে মদন উপজেলার কাইটাইল ইউনিয়নের বটতলা সংলগ্ন গণেশ হাওড়ের পতিত মাঠে অভিযান চালিয়ে অবৈধ ষাঁড়ের লড়াই ও লড়াইকে কেন্দ্র করে জুয়া বা বাজির আসর বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
এ অভিযানে মদন থানা পুলিশ, মদন ফায়ার সার্ভিস, কাইটাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করেন। অভিযানে লড়াইরত একটি গরুসহ একজনকে আটপাড়া উপজেলাধীন মোবারক প্রোগ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে হুমায়ুন কবির নামের এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় তদন্ত ও সংশ্লিষ্টতা যাচাইঅন্তে মদন থানা পুলিশ এ বিষয়ে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, দীর্ঘদিন ধরে মদনে ষাঁড়ের লড়াইকে কেন্দ্র করে জুয়া বা বাজির আসর হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছিল। এলাকার অসংখ্য পরিবার এ খেলাকে কেন্দ্র করে সর্বস্বান্ত হয়েছে বলে বিভিন্ন সময়ে জনপ্রতিনিধি ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ জানিয়েছিলেন। সে প্রেক্ষিতে আজ এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। জানা যায়, ষাঁড়ের লড়াই কে কেন্দ্র করে অনেকেই কুফরি কাজেও লিপ্ত হয়। এর সাথে যে বা যারা জড়িত থাকুক না কেন তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
সবার আগে আমরা আছি আপনার সাথে