Dhaka ০৪:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ৩০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঋণের চাপ বাড়াচ্ছে আত্মহত্যা

  • সমীর কুমার দে
  • Update Time : ০৫:৩৮:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ ২০২৪
  • ২৯৭ Time View

প্রকাশের সময় 14/03/2024

উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানসিক চাপ বাড়ছে। বাড়ছে ঋণের বোঝা। দ্রব্যমূল্য দিনে দিনে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি এখন এমন পর্যায়ে চলে যাচ্ছে, যেখানে মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্তে পরিণত হচ্ছে। মানুষ এখন সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। যাদের সঞ্চয় নেই, তারা ঋণ করছে। ফলে মানুষের ওপর চাপ বেড়ে যাচ্ছে।

অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, পরিস্থিতির উন্নতি না হলে দিনে দিনে সংকট আরও বাড়বে। সাম্প্রতিক সময়ে ঋণের চাপ সইতে না পেরে বেশ কয়েকটি পরিবারে সন্তানদের নিয়ে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে এনজিও বা মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে নিঃস্ব হয়েছে বহু পরিবার।

সর্বশেষ মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায় সায়মা বেগম (৩৫) তার মেয়ে ৯ বছরের ছাইমুনা এবং সাত বছরের ছেলে তাওহীদকে নিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, তিনি ঋণের চাপে আত্মহত্যা করেছেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঋণের জ্বালা সইতে না পেরে সিরাজুল ইসলাম (৫৫) নামে ঝিনাইদহের এক ব্যবসায়ী শেষমেশ বেছে নেন আত্মহত্যার পথ। সুদের যন্ত্রণা তার হূদয় কতটা ক্ষতবিক্ষত করেছে, তা ফুটে উঠেছে জীবননাশের আগে লিখে যাওয়া চিরকুটের অক্ষরে অক্ষরে। চিরকুটে তিনি লেখেন, ‘সুদখোরদের অত্যাচারে বাঁচতে পারলাম না। আমার জায়গাজমি, বাড়ি সব বিক্রি করে দিয়েছি। একেকজনের কাছ থেকে যে টাকা নেওয়া, তার সাত-আট-দশ গুণ টাকা দিয়েও রেহাই দিল না তারা। কেউ আবার কেস করেছেন, কেউ অপমান-অপদস্থ করেছেন। আমি আর সহ্য করতে পারছি না, তাই বিদায় নিলাম।’ শুধু ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম নন, আরো অনেকেই সম্প্রতি একই ধরনের আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন।

এনজিও ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে দেশীয় এনজিওর সংখ্যা ২ হাজার ৩১৮। এর মধ্যে অধিকাংশেরই আছে ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি। এ ছাড়া গ্রামে গ্রামে আছে মাল্টিপারপাস কোম্পানি; আছে নানা সমিতি ও দাদন ব্যবসায়ী। দেশের ৩ কোটি ৫২ লাখের বেশি পরিবার ক্ষুদ্রঋণ পরিষেবার আওতায় রয়েছে। ঋণ নেওয়ার পরের সপ্তাহ থেকে কিস্তি আদায় শুরু হয়। কৃষকের জমিতে ফসল ভালো না হলেও ঋণগ্রহীতাকে ঘরের গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, ঘটিবাটি বিক্রি করে সাপ্তাহিক কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। যখন তাতেও কুলায় না, তখন ভিটেমাটি ও ঘর বিক্রি করতে হয়। এমনও বহু ঘটনা ঘটেছে যে, কিস্তি আদায়কারীরা ঋণের দায়ে ঋণগ্রহীতার ঘর ভেঙে নিয়ে গেছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শহরে বিভিন্ন কাজের সুযোগ থাকলেও প্রত্যন্ত গ্রামে অসহায় দরিদ্র মানুষ সমস্যায় আছে। এ জন্য স্থানীয় প্রশাসনের উচিত এসব দাদন ব্যবসায়ীকে নিয়ন্ত্রণ করা।’

(দৈনিক ইত্তেফাক থেকে নেওয়া)

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

md rezaul hasan

Popular Post

গণপ্রকৌশল দিবস ও আইডিইবি’র ৫৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে নেত্রকোনায় বর্ণাঢ্য র‍্যালী ও আলোচনা সভা

ঋণের চাপ বাড়াচ্ছে আত্মহত্যা

Update Time : ০৫:৩৮:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ ২০২৪

প্রকাশের সময় 14/03/2024

উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানসিক চাপ বাড়ছে। বাড়ছে ঋণের বোঝা। দ্রব্যমূল্য দিনে দিনে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি এখন এমন পর্যায়ে চলে যাচ্ছে, যেখানে মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্তে পরিণত হচ্ছে। মানুষ এখন সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। যাদের সঞ্চয় নেই, তারা ঋণ করছে। ফলে মানুষের ওপর চাপ বেড়ে যাচ্ছে।

অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, পরিস্থিতির উন্নতি না হলে দিনে দিনে সংকট আরও বাড়বে। সাম্প্রতিক সময়ে ঋণের চাপ সইতে না পেরে বেশ কয়েকটি পরিবারে সন্তানদের নিয়ে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে এনজিও বা মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে নিঃস্ব হয়েছে বহু পরিবার।

সর্বশেষ মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায় সায়মা বেগম (৩৫) তার মেয়ে ৯ বছরের ছাইমুনা এবং সাত বছরের ছেলে তাওহীদকে নিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, তিনি ঋণের চাপে আত্মহত্যা করেছেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঋণের জ্বালা সইতে না পেরে সিরাজুল ইসলাম (৫৫) নামে ঝিনাইদহের এক ব্যবসায়ী শেষমেশ বেছে নেন আত্মহত্যার পথ। সুদের যন্ত্রণা তার হূদয় কতটা ক্ষতবিক্ষত করেছে, তা ফুটে উঠেছে জীবননাশের আগে লিখে যাওয়া চিরকুটের অক্ষরে অক্ষরে। চিরকুটে তিনি লেখেন, ‘সুদখোরদের অত্যাচারে বাঁচতে পারলাম না। আমার জায়গাজমি, বাড়ি সব বিক্রি করে দিয়েছি। একেকজনের কাছ থেকে যে টাকা নেওয়া, তার সাত-আট-দশ গুণ টাকা দিয়েও রেহাই দিল না তারা। কেউ আবার কেস করেছেন, কেউ অপমান-অপদস্থ করেছেন। আমি আর সহ্য করতে পারছি না, তাই বিদায় নিলাম।’ শুধু ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম নন, আরো অনেকেই সম্প্রতি একই ধরনের আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন।

এনজিও ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে দেশীয় এনজিওর সংখ্যা ২ হাজার ৩১৮। এর মধ্যে অধিকাংশেরই আছে ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি। এ ছাড়া গ্রামে গ্রামে আছে মাল্টিপারপাস কোম্পানি; আছে নানা সমিতি ও দাদন ব্যবসায়ী। দেশের ৩ কোটি ৫২ লাখের বেশি পরিবার ক্ষুদ্রঋণ পরিষেবার আওতায় রয়েছে। ঋণ নেওয়ার পরের সপ্তাহ থেকে কিস্তি আদায় শুরু হয়। কৃষকের জমিতে ফসল ভালো না হলেও ঋণগ্রহীতাকে ঘরের গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, ঘটিবাটি বিক্রি করে সাপ্তাহিক কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। যখন তাতেও কুলায় না, তখন ভিটেমাটি ও ঘর বিক্রি করতে হয়। এমনও বহু ঘটনা ঘটেছে যে, কিস্তি আদায়কারীরা ঋণের দায়ে ঋণগ্রহীতার ঘর ভেঙে নিয়ে গেছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শহরে বিভিন্ন কাজের সুযোগ থাকলেও প্রত্যন্ত গ্রামে অসহায় দরিদ্র মানুষ সমস্যায় আছে। এ জন্য স্থানীয় প্রশাসনের উচিত এসব দাদন ব্যবসায়ীকে নিয়ন্ত্রণ করা।’

(দৈনিক ইত্তেফাক থেকে নেওয়া)