Dhaka ০৬:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ৩০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঢাকায় কমতে শুরু করেছে কাক, হতাশ পরিবেশবাদীরা

প্রকাশের সময় 05/03/2024

 রাজধানীতে কমছে কাকের সংখ্যা। কোনো বয়সের মানুষই আর আগের মতো দেখতে পান না কাক। কতটা কমেছে এই পাখি? এতে মানুষেরই বা কী? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্ষতিটা দিনশেষে মানুষেরই। কাক বিলিনের কারণ হিসেবে উঠে আসছে খাদ্যে প্লাস্টিক; যে খাবার মানুষেরই উচ্ছ্বিষ্ট। যার প্রভাবে আগের মতো আর জন্মাচ্ছেও না নগরপক্ষী চিরচেনা কাক।
এক সময় নগরবাসির ঘুম ভাঙতো কাকের স্বরে। কিন্তু ইদানিং কী যেন হয়েছে, আগের মতো কাকের দেখা মিলছে না। ডাস্টবিনগুলো ঘিরে আর নেই শত শত কাক। তবে কি তীলত্তমা এ শহর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো পাখিরূপে প্রাকৃতিক এ পরিচ্ছ্বনতাকর্মী?
বয়স ৭০ এর কাছাকাছি ইঞ্জিনিয়ার নজরুল ইসলাম। তিনিও বলছেন একই কথা। জানতে চাওয়া হলো, আগের মতো আর কাক দেখেন না আজ ক’বছর? উত্তরে জানান, আগে কাকের ডাকে ঘুম ভাঙতো। কিন্তু এখন আর তেমন দেখা যায় না এই শহরে। বললেন, জমিতে প্রতিনিয়ত কিটনাশকের ব্যবহার প্রভাব ফেলছে কাকের জীবনচক্রে।
নজরুল ইসলামের মতো করে না হলেও, কাকশূন্যতা টের পায় তরুণরাও। একই কথা জানালেন আবির হোসেন নামের আরেক যুবক। তার মতে, অনিয়ন্ত্রিত শিল্পকারখানা ও এ থেকে সৃষ্ট ক্ষতিকর ধোঁয়াই কাল হয়ে দাঁড়াচ্ছে কাক ও অন্যান্য পাখিদের জন্য।
বলা হয়, পক্ষীকূলে বুদ্ধিমত্তায় চৌকস এই কাক। শক্ত তার অভিযোজন ক্ষমতা। তারপরও কী এমন প্রতিকূলতা পরিবেশে, যা কাকেদেরও থাকতে দিচ্ছে না এই নগরে? প্রশ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও গবেষক অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলামের কাছে। তিনি বলেন, কাকের খাদ্য, নিরাপত্তা, বাসস্থান কমে যাচ্ছে। কমে যাচ্ছে এদের প্রজননের জায়গা।
কাকের বুদ্ধিমত্তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কাক শুধু পানি খায়ই না, তারা গোসলও করে। সে জায়গাগুলো এখন কমে গেছে শহরে।
প্লাস্টিকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের কথা তুলে ধরেন এই ঢাবি গবেষক। তিনি বলেন, খাদ্যের মাধ্যমে মাইক্রো প্লাস্টিকের কণায় কমে যাচ্ছে কাকের প্রজনন ক্ষমতা। সংরক্ষণ আর উন্নয়ন এক সঙ্গে চলতে চলতে পারে না। উন্নয়নের জন্য এই জিনিসগুলোকে ছাড় দিতে হবে।
বন্যপ্রাণী নিয়ে সবশেষ আইনের সংশোধনে ক্ষতিকর প্রাণী তালিকা থেকে কাককে মুক্ত করে আনায় অন্যতম ছিলেন ড. আনোয়ারুল। তার মতে, পরিবেশের স্বাস্থ্য নির্দেশ করে বন্য প্রাণীরা। পরিবেশের স্বাস্থ্য যে ভালো নেই, তারই প্রমাণ কাকশূণ্যতা। এর খেসারত দিতে হবে নগর ও নাগরিকদের।
নগরের টেকসই উন্নয়ন করতে গেলে, নগরপক্ষী কাককেও এই নগরে থাকতে দিতে হবে।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

taipur rahman

Popular Post

গণপ্রকৌশল দিবস ও আইডিইবি’র ৫৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে নেত্রকোনায় বর্ণাঢ্য র‍্যালী ও আলোচনা সভা

ঢাকায় কমতে শুরু করেছে কাক, হতাশ পরিবেশবাদীরা

Update Time : ০৫:৩৭:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ মার্চ ২০২৪

প্রকাশের সময় 05/03/2024

 রাজধানীতে কমছে কাকের সংখ্যা। কোনো বয়সের মানুষই আর আগের মতো দেখতে পান না কাক। কতটা কমেছে এই পাখি? এতে মানুষেরই বা কী? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্ষতিটা দিনশেষে মানুষেরই। কাক বিলিনের কারণ হিসেবে উঠে আসছে খাদ্যে প্লাস্টিক; যে খাবার মানুষেরই উচ্ছ্বিষ্ট। যার প্রভাবে আগের মতো আর জন্মাচ্ছেও না নগরপক্ষী চিরচেনা কাক।
এক সময় নগরবাসির ঘুম ভাঙতো কাকের স্বরে। কিন্তু ইদানিং কী যেন হয়েছে, আগের মতো কাকের দেখা মিলছে না। ডাস্টবিনগুলো ঘিরে আর নেই শত শত কাক। তবে কি তীলত্তমা এ শহর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো পাখিরূপে প্রাকৃতিক এ পরিচ্ছ্বনতাকর্মী?
বয়স ৭০ এর কাছাকাছি ইঞ্জিনিয়ার নজরুল ইসলাম। তিনিও বলছেন একই কথা। জানতে চাওয়া হলো, আগের মতো আর কাক দেখেন না আজ ক’বছর? উত্তরে জানান, আগে কাকের ডাকে ঘুম ভাঙতো। কিন্তু এখন আর তেমন দেখা যায় না এই শহরে। বললেন, জমিতে প্রতিনিয়ত কিটনাশকের ব্যবহার প্রভাব ফেলছে কাকের জীবনচক্রে।
নজরুল ইসলামের মতো করে না হলেও, কাকশূন্যতা টের পায় তরুণরাও। একই কথা জানালেন আবির হোসেন নামের আরেক যুবক। তার মতে, অনিয়ন্ত্রিত শিল্পকারখানা ও এ থেকে সৃষ্ট ক্ষতিকর ধোঁয়াই কাল হয়ে দাঁড়াচ্ছে কাক ও অন্যান্য পাখিদের জন্য।
বলা হয়, পক্ষীকূলে বুদ্ধিমত্তায় চৌকস এই কাক। শক্ত তার অভিযোজন ক্ষমতা। তারপরও কী এমন প্রতিকূলতা পরিবেশে, যা কাকেদেরও থাকতে দিচ্ছে না এই নগরে? প্রশ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও গবেষক অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলামের কাছে। তিনি বলেন, কাকের খাদ্য, নিরাপত্তা, বাসস্থান কমে যাচ্ছে। কমে যাচ্ছে এদের প্রজননের জায়গা।
কাকের বুদ্ধিমত্তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কাক শুধু পানি খায়ই না, তারা গোসলও করে। সে জায়গাগুলো এখন কমে গেছে শহরে।
প্লাস্টিকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের কথা তুলে ধরেন এই ঢাবি গবেষক। তিনি বলেন, খাদ্যের মাধ্যমে মাইক্রো প্লাস্টিকের কণায় কমে যাচ্ছে কাকের প্রজনন ক্ষমতা। সংরক্ষণ আর উন্নয়ন এক সঙ্গে চলতে চলতে পারে না। উন্নয়নের জন্য এই জিনিসগুলোকে ছাড় দিতে হবে।
বন্যপ্রাণী নিয়ে সবশেষ আইনের সংশোধনে ক্ষতিকর প্রাণী তালিকা থেকে কাককে মুক্ত করে আনায় অন্যতম ছিলেন ড. আনোয়ারুল। তার মতে, পরিবেশের স্বাস্থ্য নির্দেশ করে বন্য প্রাণীরা। পরিবেশের স্বাস্থ্য যে ভালো নেই, তারই প্রমাণ কাকশূণ্যতা। এর খেসারত দিতে হবে নগর ও নাগরিকদের।
নগরের টেকসই উন্নয়ন করতে গেলে, নগরপক্ষী কাককেও এই নগরে থাকতে দিতে হবে।