Dhaka ০৪:৩২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নেত্রকোনায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন

প্রকাশের সময় 11/05/2024

নেত্রকোনায় চলতি বোরো মওসুমে ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা দিয়েছে। নেত্রকোনা মূলত ধান উদ্ধৃত্ত জেলা। এ জেলায় উৎপাদিত ধান স্থানীয় কৃষকদের চাহিদা পূরণ করে অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মওসুমে নেত্রকোনা জেলায় ১ লক্ষ ৮৫ হাজার ৩ শত ২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়। চলতি বোরো মওসুমে বি-আর ২৮, বি-আর ২৯, হীরা-১, হীরা-২ হাইব্রিড-৭৫, ৮১, ৮৮, ৮৯ ও ৯১, সবুজ সাথী, জাগরনীসহ বিভিন্ন প্রজাতির উচ্চ ফলনশীল ধান চাষ করা হয়। গত বোরো মওসুমে ব্রি-২৮ জাতের ধানে বøাষ্ট রোগ ও ব্যাপক চিটা দেখা দেয়ায় মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা ব্রি ২৮ এর পরিবর্তে ব্রি-৮৮ জাতের ধান চাষে পরামর্শ দেয়ায় এবার নেত্রকোনার কৃষকরা বেশী করে ব্রি-৮৮ জাতের ধান চাষ করেছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবং কোন ধরণের রোগ বালাই না দেখা দেয়ায় হাওরাঞ্চলসহ উচু এলাকায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি বিভাগ আশা করছে, এবার জেলায় যে পরিমান ধান উৎপাদিত হবে তা থেকে ৮ লক্ষ ২ হাজার ৬ শত মেট্রিক টন চাউল উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবং আগাম বন্যা, ঝড় শিলা বৃষ্টি না থাকায় প্রচন্ড রোদে কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই ধান টাকা, মাড়াই ও শুকিয়ে কৃষকরা তাদের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের ফসল গোলায় তুলতে পারছেন। নেত্রকোনার হাওরাঞ্চল হিসেবে পরিচিত জেলার খালিয়াজুরী, মদন, মোহনগঞ্জ, ও কলমাকান্দা উপজেলায় ইতোমধ্যে শত ভাগ বোরো ধান কাটা শেষ হয়েছে।

সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন হাওরাঞ্চল ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কৃষি কাজে যান্ত্রিকী করণের কারণে হাওরাঞ্চলসহ উচু এলাকায় এবার শ্রমিক সংকট নেই। কৃষকরা হারভেস্টার মেশিন দিয়ে তাদের জমির ধান দ্রæত কেটে ফেলছেন। প্রান্তিক চাষীরা বছরের খোরাকির জন্য কিছু ধান সিদ্ধ করে ভাল ভাবে শুকিয়ে ঘরে সংরক্ষণ করছেন। বাকী ধান জমি থেকেই বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফারিয়া দালালরা জমি থেকেই ধান কিনে নিচ্ছেন।

মোহনগঞ্জ উপজেলার নলজুরী গ্রামের কৃষক সাত্তার মিয়া বলেন, ‘এ বছর ধানের ফলন ভালো হয়েছে। প্রথম দিকে হাওরে ৯ শত টাকা থেকে সাড়ে ৯ শত টাকা মন দরে ধান বিক্রি করেছি। আমার ৬০ কাঠা খেতে ৪০০ মন ধান হয়েছে।’

কেন্দুয়া উপজেলার দুল্লী গ্রামের কৃষক আবুল মিয়া বলেন, ‘আমার জমিতে ভালো ধান হয়েছে। সিন্ডিকেটের কারণে দামের দাম পড়ে গেছে। এখন ধান মন প্রতি ৭ শত ২০ টাকা থেকে ৭ শত ৫০টাকা দরে বিক্রি করছি।

নেত্রকোনা জেলা কৃষি সপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, ‘চলতি বোরো মওসুমে নেত্রকোনার কৃষকরা লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশী জমিতে বোরো ধান আবাদ করেন। প্রয়োজনীয় বীজ, সার, কীটনাশক হাতের কাছে পাওয়ায় এবং সরকারের পক্ষ থেকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ফলে কৃষকরা তাদের জমিতে সঠিক সময় পর্যাপ্ত পানি দিতে পেরেছে। এছাড়াও কৃষি অফিসের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে থেকে কৃষকদের প্রয়োজনীয় সব রকম পরামর্শ প্রদান করায় এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জেলায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকরা মেশিনের সাহায্যে খুব কম সময়ে স্বল্প খরচে ধান কেটে ও মাড়াই করে সহজেই ঘরে তুলতে পারছেন। ফলে কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে’।

নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক এবং জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি শাহেদ পারভেজ বলেন, আগাম বন্যা, ঝড় বৃষ্টি আসার আগেই কৃষকরা যাতে অল্প খরছে স্বল্প সময়ের মধ্যে ধান ঘরে তুলতে পারে তার জন্য ১০ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও কৃষি কর্মকর্তাদেরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে নেত্রকোনায় ৭ শত ৩০টি কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন দেয়া হয়েছে। শনিবার পর্যন্ত হাওরাঞ্চলে শত ভাগ ও উচু এলাকার ৮০ ভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। কৃষকরা যাতে ন্যায্যমূল্য পায় তার জন্য জেলায় ধান চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

md rezaul hasan

নেত্রকোনায় পূর্ব বিরোধে হামলা,আহত ৪

নেত্রকোনায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন

Update Time : ০৬:০১:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ মে ২০২৪

প্রকাশের সময় 11/05/2024

নেত্রকোনায় চলতি বোরো মওসুমে ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা দিয়েছে। নেত্রকোনা মূলত ধান উদ্ধৃত্ত জেলা। এ জেলায় উৎপাদিত ধান স্থানীয় কৃষকদের চাহিদা পূরণ করে অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মওসুমে নেত্রকোনা জেলায় ১ লক্ষ ৮৫ হাজার ৩ শত ২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়। চলতি বোরো মওসুমে বি-আর ২৮, বি-আর ২৯, হীরা-১, হীরা-২ হাইব্রিড-৭৫, ৮১, ৮৮, ৮৯ ও ৯১, সবুজ সাথী, জাগরনীসহ বিভিন্ন প্রজাতির উচ্চ ফলনশীল ধান চাষ করা হয়। গত বোরো মওসুমে ব্রি-২৮ জাতের ধানে বøাষ্ট রোগ ও ব্যাপক চিটা দেখা দেয়ায় মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা ব্রি ২৮ এর পরিবর্তে ব্রি-৮৮ জাতের ধান চাষে পরামর্শ দেয়ায় এবার নেত্রকোনার কৃষকরা বেশী করে ব্রি-৮৮ জাতের ধান চাষ করেছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবং কোন ধরণের রোগ বালাই না দেখা দেয়ায় হাওরাঞ্চলসহ উচু এলাকায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি বিভাগ আশা করছে, এবার জেলায় যে পরিমান ধান উৎপাদিত হবে তা থেকে ৮ লক্ষ ২ হাজার ৬ শত মেট্রিক টন চাউল উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবং আগাম বন্যা, ঝড় শিলা বৃষ্টি না থাকায় প্রচন্ড রোদে কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই ধান টাকা, মাড়াই ও শুকিয়ে কৃষকরা তাদের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের ফসল গোলায় তুলতে পারছেন। নেত্রকোনার হাওরাঞ্চল হিসেবে পরিচিত জেলার খালিয়াজুরী, মদন, মোহনগঞ্জ, ও কলমাকান্দা উপজেলায় ইতোমধ্যে শত ভাগ বোরো ধান কাটা শেষ হয়েছে।

সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন হাওরাঞ্চল ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কৃষি কাজে যান্ত্রিকী করণের কারণে হাওরাঞ্চলসহ উচু এলাকায় এবার শ্রমিক সংকট নেই। কৃষকরা হারভেস্টার মেশিন দিয়ে তাদের জমির ধান দ্রæত কেটে ফেলছেন। প্রান্তিক চাষীরা বছরের খোরাকির জন্য কিছু ধান সিদ্ধ করে ভাল ভাবে শুকিয়ে ঘরে সংরক্ষণ করছেন। বাকী ধান জমি থেকেই বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফারিয়া দালালরা জমি থেকেই ধান কিনে নিচ্ছেন।

মোহনগঞ্জ উপজেলার নলজুরী গ্রামের কৃষক সাত্তার মিয়া বলেন, ‘এ বছর ধানের ফলন ভালো হয়েছে। প্রথম দিকে হাওরে ৯ শত টাকা থেকে সাড়ে ৯ শত টাকা মন দরে ধান বিক্রি করেছি। আমার ৬০ কাঠা খেতে ৪০০ মন ধান হয়েছে।’

কেন্দুয়া উপজেলার দুল্লী গ্রামের কৃষক আবুল মিয়া বলেন, ‘আমার জমিতে ভালো ধান হয়েছে। সিন্ডিকেটের কারণে দামের দাম পড়ে গেছে। এখন ধান মন প্রতি ৭ শত ২০ টাকা থেকে ৭ শত ৫০টাকা দরে বিক্রি করছি।

নেত্রকোনা জেলা কৃষি সপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, ‘চলতি বোরো মওসুমে নেত্রকোনার কৃষকরা লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশী জমিতে বোরো ধান আবাদ করেন। প্রয়োজনীয় বীজ, সার, কীটনাশক হাতের কাছে পাওয়ায় এবং সরকারের পক্ষ থেকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ফলে কৃষকরা তাদের জমিতে সঠিক সময় পর্যাপ্ত পানি দিতে পেরেছে। এছাড়াও কৃষি অফিসের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে থেকে কৃষকদের প্রয়োজনীয় সব রকম পরামর্শ প্রদান করায় এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জেলায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকরা মেশিনের সাহায্যে খুব কম সময়ে স্বল্প খরচে ধান কেটে ও মাড়াই করে সহজেই ঘরে তুলতে পারছেন। ফলে কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে’।

নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক এবং জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি শাহেদ পারভেজ বলেন, আগাম বন্যা, ঝড় বৃষ্টি আসার আগেই কৃষকরা যাতে অল্প খরছে স্বল্প সময়ের মধ্যে ধান ঘরে তুলতে পারে তার জন্য ১০ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও কৃষি কর্মকর্তাদেরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে নেত্রকোনায় ৭ শত ৩০টি কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন দেয়া হয়েছে। শনিবার পর্যন্ত হাওরাঞ্চলে শত ভাগ ও উচু এলাকার ৮০ ভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। কৃষকরা যাতে ন্যায্যমূল্য পায় তার জন্য জেলায় ধান চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে।