Dhaka ০৪:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নেত্রকোনায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন, ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় কৃষকের চোখে মুখে হাসির ঝিলিক

প্রকাশের সময় 28/04/2024

নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় এবং ন্যায্য মূল্যে ধান বিক্রি করতে পারায় কৃষকের চোখে মুখে দেখা দিয়েছে হাসির ঝিলিক।

নেত্রকোনা মূলত ধান উদ্ধৃত্ত জেলা। এ জেলায় উৎপাদিত ধান স্থানীয় কৃষকদের চাহিদা পূরণ করে অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মওসুমে নেত্রকোনা জেলায় ১ লক্ষ ৮৫ হাজার ৩ শত ২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়। গত বোরো মওসুমে ব্রি-২৮ জাতের ধানে ব্যাপক চিটা দেখা দেয়ায় মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা ব্রি ২৮ এর পরিবর্তে ব্রি-৮৮ জাতের ধান চাষে পরামর্শ দেয়ায় এবার হাওরাঞ্চলের কৃষকরা বেশী করে ব্রি-৮৮ জাতের ধান চাষ করেছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবং কোন ধরণের রোগ বালাই না দেখা দেয়ায় হাওরে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি বিভাগ আশা করছে, এবার জেলায় যে পরিমান ধান উৎপাদিত হবে তা থেকে ৮ লক্ষ ২ হাজার ৬ শত মেট্রিক টন চাউল উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।

নেত্রকোনার হাওরাঞ্চল হিসেবে পরিচিত জেলার খালিয়াজুরী, মদন, মোহনগঞ্জ, ও কলমাকান্দা উপজেলায় ইতোমধ্যে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধান দ্রæত পেকে যাচ্ছে। আগাম বন্যা, ঝড় শিলা বৃষ্টি না থাকায় প্রচন্ড রোদে কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই ধান টাকা, মাড়াই ও শুকিয়ে কৃষকরা তাদের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের ফসল গোলায় তুলতে পারছেন।

সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন হাওরাঞ্চল ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কৃষি কাজে যান্ত্রিকী করণের কারণে হাওরাঞ্চলে এবার শ্রমিক সংকট নেই। মোহনগঞ্জের ডিঙাপোতাসহ বেশীর ভাগ হাওরে কৃষকরা হারভেস্টার মেশিন দিয়ে তাদের জমির ধান দ্রæত কেটে ফেলছেন। প্রান্তিক চাষীরা বছরের খোরাকির জন্য ধান সংরক্ষণ করছেন। কৃষকের বাকী ধান হাওরের জমি থেকেই ফারিয়া দালালরা কিনে নিচ্ছেন। শেহড়াতলী গ্রামের কৃষক সবুজ মিয়া বলেন, ‘এ বছর ধানের ফলন ভালো হয়েছে। দামও ভালো পাচ্ছি। সাড়ে ৯ শত টাকা থেকে ১ হাজার টাকা মন দরে ধান বিক্রি করেছি। আমার ৮০ কাঠা খেতে ৬০০ মন ধান হয়েছে।’

খালিয়াজুরীর বল্লভপুর গ্রামের সঞ্জিত সরকার বলেন, ‘আমার জমিতে যে পরিমান ধান পেয়েছি, তা দিয়ে সংসারের ভরণ পূষনসহ ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারবো’।

নেত্রকোনা জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, ‘নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে পুরোদমে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ৭ শত ৩০টি কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন হাওরাঞ্চলে পাঠানো হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং সময়মতো প্রয়োজনীয় সার বীজ কীটনাশক প্রয়োগ করায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। খুব কম সময়ে মেশিনের সাহায্যে ধান কাটা ও মাড়াই করা হয় বলে কৃষকরা তাদের বোরো আবাদ সহজেই ঘরে তুলতে পারছেন’।

নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সারওয়ার জাহান বলেন, ‘এ বছর যথাসময়ে জেলার হাওর অঞ্চলে ফসল রক্ষা বাঁধ সংস্কার করা হয়েছে। ফলে হাওরে এবার আগাম বন্যায় বোরো ধানের কোন ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা নেই।

নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক এবং জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি শাহেদ পারভেজ বলেন, চলতি সপ্তাহে হাওরাঞ্চলে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। কৃষকরা যাতে দ্রæত সময়ে ধান কেটে সহজে ঘরে তুলতে পারেন তার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কৃষি কর্মকর্তাদেরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শনিবার পর্যন্ত হাওরাঞ্চলে ৭৫ ভাগ ও উচু এলাকার ২০ ভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

md rezaul hasan

Popular Post

নেত্রকোনায় বজ্রপাতে যুবকের মৃত্যু

নেত্রকোনায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন, ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় কৃষকের চোখে মুখে হাসির ঝিলিক

Update Time : ১২:২৩:২৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশের সময় 28/04/2024

নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় এবং ন্যায্য মূল্যে ধান বিক্রি করতে পারায় কৃষকের চোখে মুখে দেখা দিয়েছে হাসির ঝিলিক।

নেত্রকোনা মূলত ধান উদ্ধৃত্ত জেলা। এ জেলায় উৎপাদিত ধান স্থানীয় কৃষকদের চাহিদা পূরণ করে অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মওসুমে নেত্রকোনা জেলায় ১ লক্ষ ৮৫ হাজার ৩ শত ২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়। গত বোরো মওসুমে ব্রি-২৮ জাতের ধানে ব্যাপক চিটা দেখা দেয়ায় মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা ব্রি ২৮ এর পরিবর্তে ব্রি-৮৮ জাতের ধান চাষে পরামর্শ দেয়ায় এবার হাওরাঞ্চলের কৃষকরা বেশী করে ব্রি-৮৮ জাতের ধান চাষ করেছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবং কোন ধরণের রোগ বালাই না দেখা দেয়ায় হাওরে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি বিভাগ আশা করছে, এবার জেলায় যে পরিমান ধান উৎপাদিত হবে তা থেকে ৮ লক্ষ ২ হাজার ৬ শত মেট্রিক টন চাউল উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।

নেত্রকোনার হাওরাঞ্চল হিসেবে পরিচিত জেলার খালিয়াজুরী, মদন, মোহনগঞ্জ, ও কলমাকান্দা উপজেলায় ইতোমধ্যে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধান দ্রæত পেকে যাচ্ছে। আগাম বন্যা, ঝড় শিলা বৃষ্টি না থাকায় প্রচন্ড রোদে কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই ধান টাকা, মাড়াই ও শুকিয়ে কৃষকরা তাদের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের ফসল গোলায় তুলতে পারছেন।

সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন হাওরাঞ্চল ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কৃষি কাজে যান্ত্রিকী করণের কারণে হাওরাঞ্চলে এবার শ্রমিক সংকট নেই। মোহনগঞ্জের ডিঙাপোতাসহ বেশীর ভাগ হাওরে কৃষকরা হারভেস্টার মেশিন দিয়ে তাদের জমির ধান দ্রæত কেটে ফেলছেন। প্রান্তিক চাষীরা বছরের খোরাকির জন্য ধান সংরক্ষণ করছেন। কৃষকের বাকী ধান হাওরের জমি থেকেই ফারিয়া দালালরা কিনে নিচ্ছেন। শেহড়াতলী গ্রামের কৃষক সবুজ মিয়া বলেন, ‘এ বছর ধানের ফলন ভালো হয়েছে। দামও ভালো পাচ্ছি। সাড়ে ৯ শত টাকা থেকে ১ হাজার টাকা মন দরে ধান বিক্রি করেছি। আমার ৮০ কাঠা খেতে ৬০০ মন ধান হয়েছে।’

খালিয়াজুরীর বল্লভপুর গ্রামের সঞ্জিত সরকার বলেন, ‘আমার জমিতে যে পরিমান ধান পেয়েছি, তা দিয়ে সংসারের ভরণ পূষনসহ ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারবো’।

নেত্রকোনা জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, ‘নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে পুরোদমে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ৭ শত ৩০টি কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন হাওরাঞ্চলে পাঠানো হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং সময়মতো প্রয়োজনীয় সার বীজ কীটনাশক প্রয়োগ করায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। খুব কম সময়ে মেশিনের সাহায্যে ধান কাটা ও মাড়াই করা হয় বলে কৃষকরা তাদের বোরো আবাদ সহজেই ঘরে তুলতে পারছেন’।

নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সারওয়ার জাহান বলেন, ‘এ বছর যথাসময়ে জেলার হাওর অঞ্চলে ফসল রক্ষা বাঁধ সংস্কার করা হয়েছে। ফলে হাওরে এবার আগাম বন্যায় বোরো ধানের কোন ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা নেই।

নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক এবং জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি শাহেদ পারভেজ বলেন, চলতি সপ্তাহে হাওরাঞ্চলে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। কৃষকরা যাতে দ্রæত সময়ে ধান কেটে সহজে ঘরে তুলতে পারেন তার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কৃষি কর্মকর্তাদেরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শনিবার পর্যন্ত হাওরাঞ্চলে ৭৫ ভাগ ও উচু এলাকার ২০ ভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে।