Dhaka ১০:৩০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ বাড়ানোর তাগিদ তারেক রহমানের

  • Reporter Name
  • Update Time : ০১:৪৯:৪১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫
  • ১৩৩ Time View

প্রকাশের সময় 31/10/2025

বাংলাদেশে যখন কোনো তরুণী মা পর্যাপ্ত শিশু পরিচর্যার সুযোগ না পেয়ে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন, অথবা কোনো ছাত্রী সন্তান লালনপালনের দায়িত্বে পড়ে পড়াশোনা বন্ধ করে দেন, তখন ক্ষতিগ্রস্ত হয় শুধু একটি পরিবার নয়—ক্ষতিগ্রস্ত হয় গোটা দেশ। হারায় সম্ভাবনা, উৎপাদনশীলতা ও অগ্রগতির গতি।

এই বাস্তবতা বদলাতে নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ ও শিশু পরিচর্যা (চাইল্ডকেয়ার) ব্যবস্থা জাতীয় অর্থনৈতিক কৌশলের অংশ করার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলটির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ বাড়ানো ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়।বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর ২০২৪ সালের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, দেশের মোট পুরুষ শ্রমশক্তির ৮০ শতাংশ কর্মরত হলেও নারীদের মধ্যে এ হার মাত্র ৪৩ শতাংশ।
বিএনপির মতে, এই ব্যবধান কেবল পরিসংখ্যান নয়—এটি একটি সতর্কবার্তা যে, জাতির অর্ধেকেরও বেশি মেধা ও দক্ষতাকে এখনো আমরা কাজে লাগাতে পারছি না।নারীদের কর্মসংস্থান ও অংশগ্রহণ বাড়াতে দলটি সারাদেশে শিশু পরিচর্যা ব্যবস্থাকে একটি বাধ্যতামূলক অর্থনৈতিক অবকাঠামো হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে। তাদের প্রস্তাবিত উদ্যোগগুলো হলো—

সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন;সরকারি অফিসগুলোতে ধাপে ধাপে ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপনের জাতীয় পরিকল্পনা গ্রহণ; বড় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানায় বাধ্যতামূলক ডে-কেয়ার সুবিধা চালু; যেসব প্রতিষ্ঠান কর্মীদের শিশু পরিচর্যার ব্যবস্থা রাখবে, তাদের জন্য কর ছাড় ও সিএসআর (CSR) ক্রেডিট প্রদান; নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মানদণ্ড অনুযায়ী কেয়ারগিভারদের প্রশিক্ষণ ও সার্টিফিকেশন প্রোগ্রাম চালু।

বিএনপি দাবি করছে, এই সংস্কার কার্যকর হলে নারীদের কর্মসংস্থান ও পারিবারিক আয় দুই-ই বৃদ্ধি পাবে। এতে ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণির আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হবে এবং দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) অন্তত ১ শতাংশ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি যোগ হতে পারে।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ নারী। তাই শিশু পরিচর্যার ব্যবস্থা চালু হলে তাদের কাজের পরিবেশ উন্নত হবে, কর্মী ধরে রাখার হার বাড়বে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোও উপকৃত হবে।

ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (IFC) ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO)-এর যৌথ গবেষণায় বলা হয়েছে, যেসব কারখানায় ডে-কেয়ার সুবিধা আছে, সেখানে কর্মীদের অনুপস্থিতি কম এবং উৎপাদনশীলতা বেশি। এমনকি এক বছরের মধ্যেই এসব প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগের খরচ তুলেও নিতে পারে।

বিএনপি বলছে, শিশু পরিচর্যা কোনো সামাজিক দয়া নয়—এটি একটি অপরিহার্য অবকাঠামো। যেমন সড়ক বাজারকে সংযুক্ত করে, তেমনি ডে-কেয়ার সেন্টার নারীদের কর্মজীবন ও সাফল্যের সঙ্গে সংযুক্ত করে।

২০৩৪ সালের লক্ষ্য: অন্তর্ভুক্তিমূলক ট্রিলিয়ন-ডলার অর্থনীতি

দলটির দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী, ২০৩৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ট্রিলিয়ন-ডলার অর্থনীতিতে রূপান্তর করাই মূল লক্ষ্য। যেখানে প্রতিটি নাগরিক, বিশেষ করে নারী, গর্বের সঙ্গে দেশের প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।

বিএনপি মনে করে, শিশু পরিচর্যা, সমান মজুরি ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন শুধু ন্যায্যতা নয়—এটি একটি বুদ্ধিবৃত্তিক ও অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত।

দলটি স্পষ্ট করেছে—তারা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চায়, যেখানে কোনো নারীকে পরিবার ও ভবিষ্যতের মধ্যে বেছে নিতে হবে না। যেখানে প্রতিটি কর্মজীবী মা, প্রতিটি ছাত্রী নিজের সাফল্যের স্বাধীনতা পাবে, এবং সমাজের যত্ন ও সহযোগিতাকে জাতীয় অগ্রগতির ভিত্তি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

md rezaul hasan

নেত্রকোনায় মশাল মিছিলঃনিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের ৭ নেতাকর্মী আটক

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ বাড়ানোর তাগিদ তারেক রহমানের

Update Time : ০১:৪৯:৪১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫

প্রকাশের সময় 31/10/2025

বাংলাদেশে যখন কোনো তরুণী মা পর্যাপ্ত শিশু পরিচর্যার সুযোগ না পেয়ে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন, অথবা কোনো ছাত্রী সন্তান লালনপালনের দায়িত্বে পড়ে পড়াশোনা বন্ধ করে দেন, তখন ক্ষতিগ্রস্ত হয় শুধু একটি পরিবার নয়—ক্ষতিগ্রস্ত হয় গোটা দেশ। হারায় সম্ভাবনা, উৎপাদনশীলতা ও অগ্রগতির গতি।

এই বাস্তবতা বদলাতে নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ ও শিশু পরিচর্যা (চাইল্ডকেয়ার) ব্যবস্থা জাতীয় অর্থনৈতিক কৌশলের অংশ করার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলটির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ বাড়ানো ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়।বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর ২০২৪ সালের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, দেশের মোট পুরুষ শ্রমশক্তির ৮০ শতাংশ কর্মরত হলেও নারীদের মধ্যে এ হার মাত্র ৪৩ শতাংশ।
বিএনপির মতে, এই ব্যবধান কেবল পরিসংখ্যান নয়—এটি একটি সতর্কবার্তা যে, জাতির অর্ধেকেরও বেশি মেধা ও দক্ষতাকে এখনো আমরা কাজে লাগাতে পারছি না।নারীদের কর্মসংস্থান ও অংশগ্রহণ বাড়াতে দলটি সারাদেশে শিশু পরিচর্যা ব্যবস্থাকে একটি বাধ্যতামূলক অর্থনৈতিক অবকাঠামো হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে। তাদের প্রস্তাবিত উদ্যোগগুলো হলো—

সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন;সরকারি অফিসগুলোতে ধাপে ধাপে ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপনের জাতীয় পরিকল্পনা গ্রহণ; বড় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানায় বাধ্যতামূলক ডে-কেয়ার সুবিধা চালু; যেসব প্রতিষ্ঠান কর্মীদের শিশু পরিচর্যার ব্যবস্থা রাখবে, তাদের জন্য কর ছাড় ও সিএসআর (CSR) ক্রেডিট প্রদান; নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মানদণ্ড অনুযায়ী কেয়ারগিভারদের প্রশিক্ষণ ও সার্টিফিকেশন প্রোগ্রাম চালু।

বিএনপি দাবি করছে, এই সংস্কার কার্যকর হলে নারীদের কর্মসংস্থান ও পারিবারিক আয় দুই-ই বৃদ্ধি পাবে। এতে ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণির আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হবে এবং দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) অন্তত ১ শতাংশ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি যোগ হতে পারে।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ নারী। তাই শিশু পরিচর্যার ব্যবস্থা চালু হলে তাদের কাজের পরিবেশ উন্নত হবে, কর্মী ধরে রাখার হার বাড়বে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোও উপকৃত হবে।

ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (IFC) ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO)-এর যৌথ গবেষণায় বলা হয়েছে, যেসব কারখানায় ডে-কেয়ার সুবিধা আছে, সেখানে কর্মীদের অনুপস্থিতি কম এবং উৎপাদনশীলতা বেশি। এমনকি এক বছরের মধ্যেই এসব প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগের খরচ তুলেও নিতে পারে।

বিএনপি বলছে, শিশু পরিচর্যা কোনো সামাজিক দয়া নয়—এটি একটি অপরিহার্য অবকাঠামো। যেমন সড়ক বাজারকে সংযুক্ত করে, তেমনি ডে-কেয়ার সেন্টার নারীদের কর্মজীবন ও সাফল্যের সঙ্গে সংযুক্ত করে।

২০৩৪ সালের লক্ষ্য: অন্তর্ভুক্তিমূলক ট্রিলিয়ন-ডলার অর্থনীতি

দলটির দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী, ২০৩৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ট্রিলিয়ন-ডলার অর্থনীতিতে রূপান্তর করাই মূল লক্ষ্য। যেখানে প্রতিটি নাগরিক, বিশেষ করে নারী, গর্বের সঙ্গে দেশের প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।

বিএনপি মনে করে, শিশু পরিচর্যা, সমান মজুরি ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন শুধু ন্যায্যতা নয়—এটি একটি বুদ্ধিবৃত্তিক ও অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত।

দলটি স্পষ্ট করেছে—তারা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চায়, যেখানে কোনো নারীকে পরিবার ও ভবিষ্যতের মধ্যে বেছে নিতে হবে না। যেখানে প্রতিটি কর্মজীবী মা, প্রতিটি ছাত্রী নিজের সাফল্যের স্বাধীনতা পাবে, এবং সমাজের যত্ন ও সহযোগিতাকে জাতীয় অগ্রগতির ভিত্তি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে